Header Ads

কেনো বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে?


Bibah Bicched Bangladesh




“বিবাহ বন্ধন” এমন একটি বন্ধন, যে বন্ধনে থাকে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত এবং পরিপূর্ণ পারিবারিক সমৃদ্ধি। কিন্ত কষ্ট হলেও সত্য যে, দিন দিন এই বন্ধন দুর্বল হতে চলেছে। যদিও আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে পদার্পণ করেছি, কিন্তু আমরা এই আধুনিকতার সাথে নিজেদের মধ্যে এতোটাই আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে আসছি যে, নিজদের মূল্যবোধকে ঠিক রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারন বর্তমানে মানুষ দিন দিন আধুনিকতার সাথে তাল মিলয়ে চলার জন্য নিজের পারিবারিক সম্পর্ককেও মুল্যায়ন করছে না। ভার্চুয়াল জগতে মানুষ এতোটাই আসক্ত হচ্ছে তা আসলে বলার মতো নয়। এরই জন্য মানুষ এর মধ্যে মানুষ এর বন্ধন হালকা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিবাহ বিচ্ছেদ এর মত মারাত্মক ঘটনা আখন অহরহও হচ্ছে। এতে মানুষ সঙ্গীহীন হয়ে পড়ছে। আর এক পরিসংখ্যানে বের হয়েছে যে বিগত কয়েক দশকে মানুষ সঙ্গিহীন তথা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে দ্বিগুন। এবং মানুষ তাদের বন্ধন ভেঙ্গে আলাদা থাকার প্রবনতা বেড়েছে তিনগুন।
কিন্তু কেনো বাংলাদেশে এই ধরনের সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন হ্রাস, বহুগামিতা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, অতিমাত্রায় ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ, অর্থনৈতিক ভাবে নারীদের শক্ত অবস্থান, শারীরিক এবং মানষিক নির্যাতনের কারনেই বিবাহ বিচ্ছেদ এবং আলাদা থেকে জীবনযাপন করার প্রবনতা বাড়ছে।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, বিগত ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত শুধু মাত্র ঢাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার এবং বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়েছে আরো ৫০ হাজার। এর বাইরেও যারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন তারা অনেকেই দুই সিটি করপোরেশানকে অবিহিত করে না। আর যারা অবিহিত করেন তাদের মধ্যে ১০ জনের ৭ জনই নারী। তবে নারী পুরুষ একসাথে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা জানিয়েছেন এমন খুব কমই ঘটে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, বর্তমানে প্রতি হাজারে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ১ দশমিক ১ জন, আর ২০০৬ সালের এর পরিমান ছিল মাত্র দশমিক ৬ জন যেটা অনেক দুঃখজনক। আর পৃথক থাকার প্রবনতা বেড়েছে প্রতি হাজারে দশমিক ৬ জনে যা আগে ছিল দশমিক ২ জন।
আরও জানা যায় যে, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা নারীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান সবচেয়ে বেশি যার পরিমান হলো প্রতিহাজারে ১ দশমিক ৭ জন যেখানে অশিক্ষিত নারীদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান হচ্ছে প্রতিহাজারে দশমিক ৫ জন। আরেকটি অবাক করার বেপার হলো, শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান বেশি।
বিভাগীয় শহরের কথায় যদি আমরা আসি তাহলে আমরা জানতে পারি যে, রাজশাহীতে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখা হচ্ছে, ১ দশমিক শূন্য ৯। আর এর পরেই অবস্থান করছে বিভাগীয় শহর খুলনা।
বিবাহ বিচ্ছেদের মত হতাশজনক ঘটনা ঘটার পিছে মুল কারন কি? বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন যে, দাম্পত্য কলহ, জীবিকার অভাব, অনৈতিক চর্চা, অনিরাময়যোগ্য রোগ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বন্ধাত্ব, বহুগামিতা।
মনোবিজ্ঞানিরা আরো বলেছেন যে, জীবনে চলার পথে যদি বিবাহ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তখন সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলাফল বিবাহ বিচ্ছেদ। এরপর আরো জানা যায় যে, বিয়ের পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক, পারস্পারিক অবিশ্বাস, মাদকাশক্তি, হতাশা ইত্যাদি এসব কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে।
অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ আসলে কারো জীবনেই কাম্য নয়। কারন এটি এক ধরনের অভিশাপ। অভিশাপ বলবো এই জন্যে, যার জীবনে বিবাহ বিচ্চেদের মতো এই মারাত্বক ঘটনা ঘটে তার জীবন নির্বাহ করা অনেক দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তাই আমাদের উচিত যে, পরিবারকে ভালোবাসা। পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সময় দেয়া। একজন আরেকজনের সাথে মিলেমিশে বোঝাপড়ার যে বেপার থাকে তা সবসময় ঠিক রাখা। নিজেকে ভার্চুয়াল জগত থেকে বের করে এনে পরিবারের দায়-দায়িত্ব গুলো পালনে ব্যস্ত থাকা, তাহলেই এই বিবাহ বিচ্ছদের মতো ঘটনা কমতে থাকবে।

1 comment:

Powered by Blogger.